৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকোটি ছিল চরম দুর্ভোগের কারণ। প্রায় এক যুগ আগে স্বেচ্ছাশ্রমে আমলাভাঙা খালের ওপর সাঁকোটি নির্মাণ করেছিল গ্রামবাসী। এরপর প্রতি বছরই মেরামত করে পারাপারে এটি ব্যবহার করে আসছে এলাকার মানুষ। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহারে সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল। লোকজন ওঠলেই থরথর করে কাঁপতো। তবু বাধ্য হয়েই সাঁকোটি দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছিল শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় লোকজন। সর্বশেষ চলতি মাসে স্থানীয়রা উদ্যোগ গ্রহণ করে কাঠের সাঁকোটি পুনঃনির্মাণের।

জানা গেছে, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের দক্ষিণ কাজিরহাওলা ও কাছিয়াবুনিয়া গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া আমলাভাঙা খালের ওপর ৩০০ ফুট লম্বা একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন এলাকাবাসী। আর সেই সাঁকো পেরিয়ে দক্ষিণ কাজির হাওলা, উত্তর কাজিরহাওলা, গণ্ডাদুলা, নিজ হাওলা, উনিশ নম্বর রাঙ্গাবালী ও কাছিয়াবুনিয়া গ্রামের অন্তত এক হাজার লোক পারাপার হয়ে থাকেন। সেতুর উত্তর পাড়ে দক্ষিণ কাজির হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আর দক্ষিণ পাড়ে রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদ, রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, রাঙ্গাবালী হামিদিয়া রশিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজ, কাছিয়াবুনিয়া মাধ্যমিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত।

তাই দক্ষিণ কাজির হাওলা, উত্তর কাজিরহাওলা, গণ্ডাদুলা, নিজ হাওলা, উনিশ নম্বর ও কাছিয়াবুনিয়া গ্রামের অন্তত এক-দেড় হাজার লোককে প্রতিদিন আমলাভাঙা খাল পারাপার হতে হয়। এ কারণে স্থায়ী দুর্ভোগ লাঘবে সরকারিভাবে একটি সেতু নির্মাণের দাবি গ্রামবাসীর। সরেজমিনে দেখা গেছে, দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২২ দিন ধরে আমলাভাঙ্গা খালে প্রায় ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করছে গ্রামবাসী। গত তিন দিন আগে শেষ হয়েছে নির্মাণ কাজ। ইতোমধ্যে সেতু দিয়ে লোকজন পারাপারও হতে শুরু হয়েছে। দক্ষিণ কাজির হাওলা গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ মোল্লা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এই আমলাভাঙা খালটা দিয়ে লোকজন পারাপারে খুবই সমস্যা।

আমরা গ্রামবাসী একটি কমিটি করে আমাদের নিজেদের উদ্যোগে ২০০৮ সাল থেকে আমরা এই সাঁকোটি নির্মাণ করেছিলাম। তখন আমাদের এক লাখ ২৮ হাজার টাকা দিয়ে গ্রামবাসীর অর্থায়নে নির্মাণ করেছি। কিন্তু চেয়ারম্যান,মেম্বার ও আমলাদের শরণাপন্ন হলে তাঁরা আশ্বাস দেন সেতু নির্মাণের। কিন্তু সেই দাবি পূরণ হয়নি। চলতি বছর আমরা উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়ের কাছে গিয়েছিলাম তিনি আমাদের কাজে সহযোগীতা করেছেন এবং এক লাখ ২০ হাজার টাকার একটি অনুদান দিয়েছেন তাতে আমাদের কাজ সম্পন্ন হয়নি। পরে গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে আরো এক লাখ ৪৬ হাজার টাকা জোগান দিয়ে কাঠের সেতুটি নির্মাণ করি।

সেতু নির্মাণ কাজের আরেক উদ্যোক্তা রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজের শিক্ষক নাজমুল মাসুদ বলেন, একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছিল এখানকার মানুষ। গ্রামাবাসীর অর্থায়নে প্রতিবছরই একটি বাঁশের সাঁকো সংস্কার করে পারাপার হয়ে আসছি। চলতি বছর উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি এখানে ডোনেশন করেন বাকিটা গ্রামবাসীর অর্থায়নে করেছি। কিন্তু যেভাবে করেছি তাতে হয়তো দুই বছর যেতে পারে। স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। আমাদের দাবি, সরকারি উদ্যোগে এখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হোক।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির আহম্মেদ বলেন, ‘আমলাভাঙা খালের ওপর দীর্ঘদিন ধরে ওখানকার লোকজন একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়ে আসছে। চলতি অর্থবছরে উপজেলা পরিষদ থেকে তাদের দুই ধাপে ৯০ হাজার টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে এবং আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অর্থ যোগান দিয়েছি। একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করার জন্য। ওখানে যাতে একটি স্থায়ী সেতু নির্মিত হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করছি যাতে দ্রুত গ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হয়।’ উপজেলা প্রকৌশলী মো. মিজানুল কবির বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে জায়গা পরিদর্শন করে লোহার ব্রিজ প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।